উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
হাসপাতালের বিছানায় অটোরিকশাচালক আবদুল মোকাদ্দেস (বাঁয়ে) ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
প্রকাশ্যে এক যুবককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। যুবকের বুকের ওপর পা দিয়ে নির্যাতনের ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল ২০১৬ সালে।
এবার সেই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, চুরির অভিযোগে আবদুল মোকাদ্দেস নামের এক অটোরিকশাচালককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছেন। গতকাল রোববারলাঠি, বেত ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় অটোরিকশাচালক মোকাদ্দেসকে চেয়ারম্যানের ‘টর্চার সেলে’ ফেলে রাখা হয়।পরে স্থানীয়রা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। নির্যাতনের শিকার মোকাদ্দেস একই ইউনিয়নের আলেকদিয়া কাটা এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন অভিযোগে এর আগেও অনেককে নির্যাতন করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। নিজ বাড়িতে নিয়ে যে ঘরে তিনি অন্যদের নির্যাতন করেন, সেটি ‘টর্চার সেল’নামেই তাদের কাছে পরিচিতি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল মোকাদ্দেস সাংবাদিকদের বলেন, ‘চেয়ারম্যানের (জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী) কথা বলে গত শনিবার রাতে আলেকদিয়া পাড়া এলাকার আবদুল সালামের ছেলে মাদু আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সারা রাত চেয়ারম্যানের বাড়িতে আটকে রাখার পর লোহা চুরির অভিযোগে পরের দিন রোববার সকালে চেয়ারম্যান জাহেদ আমাকে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। লাঠি, বেত ও হাতুড়ির দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। মারধরের সময় সোনাইয়া কাটা এলাকার মাহমুদের ছেলে কায়সার ও শমশু আলমের ছেলে বাদশাহ আমার হাত-পা আটকে রাখে।’
নির্যাতিত অটোচালকের মা শাকেরা বেগম বলেন, ‘আমার নির্দোষ ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ। একইভাবে সে অনেক নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।’
শাকেরা বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলে যদি অপরাধ করে, তবে তার জন্য দেশে আইন-আদালত রয়েছে। তাকে আইনের হাতে সোপর্দ না করে, কেন এভাবে নির্যাতন চালানো হলো? আমার ছেলের ওপর চালানো নেক্কারজনক নির্যাতনের আমি বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। এলাকার পাহারাদাররা তাকে (আবদুল মোকাদ্দেস) ধরে নিয়ে এসে আমার কাছে এলে আমি স্থানীয় একজনের জিম্মায় দেই। পরে মনে হয় স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করেছে।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘ওই লোক (আবদুল মোকাদ্দেস) একজন চোর, মাদকসেবী। আমি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাই। এটা কি আমার অপরাধ হতে পারে?’
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব-উল করিম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেনি। তার পরও আমি ঘটনাটি ফেসবুকে দেখে চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’
এর আগে ২০১৬ সালের ৯ জুন পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউপির সামনের রাস্তায় শতাধিক মানুষের সামনে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার হয়েছিল রেজাউল করিম নামের এক যুবক। প্রেমিকাকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ তুলে রেজাউলকে রাস্তার ওপর ফেলে নির্যাতন করেছিলেন তিনি। রেজাউল একই ইউনিয়নের গুদিকাটা গ্রামের মোস্তাক আহমদের ছেলে।
সে সময় একটি লাটি হাতে রেজাউলের বুকের ওপর পা দিয়ে পিটুনির একটি ছবি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ফিল্মি স্টাইলে দেড় ঘণ্টাব্যাপী চালানো ওই নির্যাতন সহ্য করেও নিস্তার হয়নি রেজাউলের। আহতাবস্থায় তাকে পুলিশে দিয়েছিল চেয়ারম্যান জাহেদ।
সুত্র: দৈনিক আমাদের সময়
পাঠকের মতামত